:: এম.আর মাহমুদ ::
করোনা মহামারির পর সারাবিশ্বে যখন মহা সংকটে তখনই বাংলাদেশের কিছু কিছু প্রতারক করোনাকে পুঁজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতির নজির বিশ্ব রেকর্ড করেছে। এক্ষেত্রে একটি পুরনো প্রভাব না বললে হয় না “আল্লাহ তুমি মালিক কাউরে দিছো টিয়ার বাচ্চা, কাউরে দিছো শালিক” দূর্ভাগ্য অভাগাদের কপালে কুত্তার বাচ্চাও জুটেনি। বিশেষ করে করোনামুক্ত সনদপত্র নিয়ে যে কেলেঙ্কারীর খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের ভাবমূর্তি ভুলুন্ঠিত হয়েছে। এজন্য দায়ী কে তা সময়ই বলে দেবে। এ অপকর্মের মূল হোতা মোহাম্মদ শাহেদ করিম (প্রকাশ শাহেদ), ডাঃ সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী। বর্তমানে তারা আটক হয়েছে। সকালে শুভ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত পালিয়ে যাওয়ার পথে বোরকা পরিহিত শাহেদ একটি পিস্তলসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। শুভ সংবাদটি দেখে র্যাবের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ না জানানোটা অকৃতজ্ঞতায় হবে। কবি গুরু রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয় ‘বড় চোর, বড় বীর, থাকে তার উঁচুশির’ স্বল্প শিক্ষিত মহাপন্ডিত শাহেদ ভাগ্যের গুণে অঢেল সহায়-সম্পদের মালিক। টেলিভিশনের পর্দায় টক-শোতেও অংশ নিয়ে দেশবাসীকে এতদিন অনেক নীতি-বাক্য শুনিয়েছেন। অথচ তার অপকর্ম অনেকে জানলেও বলার সাহস পায়নি। কারণ তার পরিচয় ছিল শাসক দলের পদ-পদবী। সে জন্য দিব্যি আরামে রাত-দিন করেছে প্রতারণা, করেছে ধরাকে সরাজ্ঞান। চোরের দশ দিন, মালিকের এক দিন। শেষ রক্ষা হয়নি শাহেদের। করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর করোনা টেস্টের অনুমতি দিয়েছে লাইসেন্স বিহীন কথিত হাসপাতাল রিজেন্টকে। এ হাসপাতালের কর্ণধার ছিলেন শাহেদ। রিজেন্টের সাথে করোনা টেস্টের চুক্তি সম্পাদনের সময় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গত কারণে যে কেউ জানতে চাইতে পারে, তারা কি জানত না যে হাসপাতালের সাথে করোনা টেস্ট চুক্তি করতে যাচ্ছে হাসপাতালটি একটি ভূঁয়া প্রতিষ্ঠান। যাক এ সুযোগ নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার শাহেদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সবচাইতে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ইতালীগামী প্রবাসীদেরকে ভূঁয়া করোনামুক্ত সার্টিফিকেট দিয়ে বিমানে করে ইতালীতে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু বিধি-বাম ইতালী বিমান বন্দরে গিয়ে বিমানভর্তি বাংলাদেশী যাত্রীদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের মাঝে অধিকাংশ যাত্রী করোনা রোগে আক্রান্ত। ফলে বিমানটিকে করোনা বোমা হিসেবে চিিহ্নত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সংবাদটি ইতালীসহ বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ দৈনিকে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই ভেবে দেখা দরকার। এতে বিদেশগামী যাত্রীদেরও অপূরণীয় ক্ষতিসহ নানা দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এরশাদ জামানায় একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মন্তব্য বার বার মনে পড়ে “বনকর্মীদের সহযোগিতা ছাড়া সংরক্ষিত বনের গাছ উজাড় করা যায় না। ভূমি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া খাস জমি দখল করা কারো পক্ষে সম্ভব হয় না। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা না পেলে রাতা-রাতি কেউ এরশাদ সিকদার হতে পারে না।” অনুরূপভাবে শাহেদ শাসকদলের অর্থপূর্ণ উদারতায় একজন মহাশক্তিধর প্রতারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বলে আমজনতার অভিমত। শাহেদ সব ধরণের প্রতারণায় একজন অঘটন ঘটন পটিয়াশি। সরকারের অঘোষিত রাজনৈতিক পার্টনার জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা রংপুরে বলেছেন, বর্তমান সরকারের শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামীলীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই দূর্নীতির সাথে জড়িত। হয়তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবল ইচ্ছা থাকার পরও রাতা-রাতি দলের “দুধের মাছিদের তাড়াতে পারছে না” তবে ইতিমধ্যে অনেকেই ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীকে বিদায় করতে পারলে করোনাকালীন স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম নিয়ে সমালোচনার দায় থেকে মুক্ত হতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বিগত সময়ের সমবায় মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। উনার কথা সাথে কিছু কিছু মানুষের ভিন্ন মত রয়েছে।
আওয়ামীলীগে এখনও অনেক ভাল ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছে। যারা হয়তো হাইব্রীড ভেজালের ঠেলায় আসল উদাওয়ের অবস্থায়। পুরনো দল হিসেবে এ দলের অনেক স্মৃতি রয়েছে। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ত্যাগী নেতারা দল ছেড়ে পালায়নি। তারা সুখে দুঃখে দলের সাথে ছিল, এখনও আছে। এখন দলের সুসময় তাই “হাইব্রীড বসন্তের কোকিলদের অভাব নেই”। সরকার করোনাকালীন সময় ত্রাণ চুরির অপরাধে অনেক জনপ্রতিনিধিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এছাড়া করোনার ভূঁয়া সনদপত্র বিক্রির অভিযোগে রিজেন্টের শাহেদ ডাঃ সাবরিনা চৌধুরী সহ তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল। একটি কথা না বললে হয়না করোনা রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ ডাঃ মঈনুদ্দিন নিজে আক্রান্ত হয়ে সুচিকিৎসার স্বার্থে ঢাকায় যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার চেয়েছিল, পায়নি। একটি ভাল মানের এ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল, তাও পায়নি। সাধারণ একটি এ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকায় পৌঁছানোর পর ওই ডাক্তারের জীবন প্রদীপ নিঁভে গেছে। হয়তো তার পরিবার ৫০ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে পাবে। কিন্তু ডাঃ মঈনুদ্দিনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা কখনও এ দুঃসময়ের স্মৃতিগুলো মন থেকে মুছতে পারবে না। অথচ শাহেদ গ্রেফতার হওয়ার পর র্যাব তাকে হেলিকপ্টার যুগে ঘটনাস্থল থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। এজন্য বলতে হয় “বড় বড় বানরের বড় বড় পেট, লঙ্কায় পড়ে বানর মাথা করে হেড।”
লেখক :: এম আর মাহমুদ. দৈনিক সমকাল-চকরিয়া প্রতিনিধি
সভাপতি -চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার ।
পাঠকের মতামত: